স্বভাবতই মূর্ধন্য ‘ষ’ হয়- এমন উদাহরণ কোনটি?
কতগুলো শব্দে স্বভাবতই মূর্ধণ্য-ষ বসে।
যেমন:
আষাঢ় শেষ ঈষৎ মেষ
ভাষা কলুষ ভাষ্য মানুষ।
ষোড়শ কোষ পৌষ রোষ
ষট্ পুরুষ মানুষ পাষণ্ড ষণ্ড প্রত্যূষ।
আভাষ ভাষণ অভিলাষ পোষণ
ঊষর তোষণ ঊষা শোষণ।
ঔষধ বিষাণ ষড়যন্ত্র পাষাণ
বিশেষ ভূষণ সরিষা দূষণ।
Related Questions
দেশীয় শব্দে ট-বর্গীয় ধ্বনির সঙ্গে 'শ' যুক্ত হয়।
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ অনুযায়ী, মূর্ধন্য 'ষ' ধ্বনির ব্যবহার সাধারণত তৎসম বা সংস্কৃত থেকে আগত শব্দে দেখা যায়। বিশেষত ট-বর্গীয় ধ্বনির (ট, ঠ, ড, ঢ) পূর্বে 'ষ' যুক্ত হয় তৎসম শব্দে, যেমন - কষ্ট, স্পষ্ট, নষ্ট, কাষ্ঠ।
তবে, দেশীয় (খাঁটি বাংলা), তদ্ভব এবং বিদেশি শব্দের বানানে মূর্ধন্য 'ষ' ব্যবহার করা হয় না। এর পরিবর্তে 'শ' অথবা 'স' ব্যবহৃত হয়। , দেশীয় শব্দে ট-বর্গীয় ধ্বনির সঙ্গে 'শ' যুক্ত হয়।
পোশাক ফারসি শব্দ, জিনিস আরবি শব্দ।
যেসব তৎসম শব্দে ‘ষ’ রয়েছে তা বাংলায় অবিকৃত আছে। তৎসম শব্দের বানানে ষ এর সঠিক ব্যবহারের নিয়মই ষত্ব বিধান।
ষ ব্যবহারের নিয়ম :
ঋ - কারে পরে মূর্ধন্য - ষ হয়। যেমন: ঋষি, বৃষ, বৃষ্টি।
অ, আ, বাদে অন্য স্বরবর্ণ, ক এবং র বর্ণের পরের প্রত্যয়াদির দন্ত্য - স এর মূর্ধন্য - ষ হয়। যেমন: ভবিষ্যৎ, পরিষ্কার, মুমূর্ষ।
'অতি', 'অভি' এমন শব্দের শেষে ই - কার উপসর্গ এবং 'অনু' আর 'সু' উপসর্গের পরে কতগুলো ধাতুর দন্ত্য - স এর মূর্ধন্য - ষ হয়। যেমন: অতিষ্ঠ, অনুষ্ঠান, নিষেধ, অভিষেক, বিষণ্ন('ণ্ন' মূর্ধ - ণ পরে দন্ত্য - ন), সুষম।
নিঃ, দুঃ, বহিঃ, আবিঃ, চতুঃ, প্রাদুঃ এ শব্দগুলোর পর ক্, খ্, প্, ফ্ থাকলে বিসর্গ (ঃ) এর জায়গায় মূর্ধন্য - ষ হয়। যেমন: নিঃ + কাম > নিষ্কাম, দুঃ + কর > দুষ্কর, বহিঃ + কার > বহিষ্কার, নিঃ + পাপ > নিষ্পাপ।
কিছু শব্দ স্বভাবতই মূর্ধন্য - ষ হয়। যেমন: আষাঢ়, নিষ্কর, পাষাণ, ষোড়শ ইত্যাদি।
কতগুলো শব্দ বিশেষ নিয়মে মূর্ধন্য - ষ হয়। যেমন: সুষুপ্তি, বিষম, বিষয়, দুর্বিষহ, যুধিষ্ঠির ইত্যাদি।
কোথায় কোথায় ষত্ব বিধান নিষেধ বা খাটে না সম্পাদনা
সাৎ প্রত্যয়ের দন্ত্য - স এর মূর্ধন্য - ষ হয় না। যেমন:
ভূমিসাৎ, ধূলিসাৎ, আকস্মাৎ।
খাঁটি বাংলা ও বিদেশী শব্দে মূর্ধন্য - ষ হয় না। যেমন:
টেক্স, পুলিশ, জিনিস, মিসর, গ্রিস, স্টেশন, মুসাবিদা।
অঃ বা আঃ থাকলে তার পরে ক্, খ্, প্, ফ্ সন্ধিযুক্ত হলে বিসর্গ (ঃ) এর জায়গায় দন্ত্য - স হয়। যেমন:
পুরঃ + কার = পুরস্কার, ভাঃ + কর = ভাস্কর, তিরঃ + কার = তিরস্কার, পরঃ + পর = পরস্পর, স্বতঃ + ফূর্ত = স্বতঃস্ফূর্ত
অঃ বা আঃ থাকলে তার পরে ক্, খ্, প্, ফ্ ছাড়াও ত থাকলেও স হতে পারে, যেমন:
মনঃ + তাপ = মনস্তাপ, শিরঃ + ত্রাণ = শিরস্ত্রাণ
কতগুলো শব্দে স্বভাবতই মূর্ধন্য - ণ হয়। যেমন:
চাণক্য মাণিক্য গণ বাণিজ্য লবণ মণ
বেণু বীণা কঙ্কণ কণিকা।
কল্যাণ শোণিত মণি স্থাণু গুণ পুণ্য বেণী
ফণী অণু বিপণি গণিকা।
আপণ লাবণ্য বাণী নিপুণ ভণিতা পাণি
গৌণ কোণ ভাণ পণ শাণ।
চিক্কণ নিক্কণ তূণ কফণি (কনুই) বণিক গুণ
গণনা পিণাক পণ্য বাণ।
চাণক্য, মাণিক্য, কণা, গৌণ, নিপুণ, বাণিজ্য, লবণ, পণ্য, পুণ্য, বণিক, মণ, শোণিত, বিপণী, পণ, বীণা, বাণ, লাবণ্য, কণিকা, মণি, শাণ প্রভৃতি।
যে বিধি অনুসারে তৎসম শব্দে 'ণ' এর ব্যবহার হয় এবং অতৎসম শব্দে 'ণ' এর ব্যবহার না হয়ে 'ন' এর ব্যবহার হয় , তাকে ণ - ত্ব বিধি বা ণ - ত্ব বিধান বলে এবং তৎসম শব্দের বানানে 'ষ' এর সঠিক ব্যবহারের নিয়মই ষ - ত্ব বিধান। ণ - ত্ব বিধানের নিয়মানুযায়ী ,ত বর্গীয় বর্ণের সঙ্গে যুক্ত 'ন' কখনো 'ণ' হয় না। যেমন - অন্ত, গ্রন্থ, ক্রন্দন। ষ - ত্ব বিধানের নিয়ম অনুসারে , খাঁটি বাংলা ও বিদেশি ভাষা থেকে আগত শব্দে 'ষ' হয় না। যেমন - দেশি ,জিনিস, পোশাক, মাস্টার। কতগুলো শব্দে স্বভাবতই মূর্ধন্য - ষ হয়। যেমন - আষাঢ়, ভাষা, ভাষণ, ঊষা, পাষাণ ইত্যাদি।
জিজ্ঞাসার ভিত্তিতে এখানে "অপরাহ্ন" শব্দটি অশুদ্ধ বানান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ণ-ত্ব বিধান অনুসারে, "অপরাহ্ন" এর সঠিক বানান হচ্ছে "অপরাহ্ণ।"
প্রথমে দেখে নেওয়া যাক:
নির্নিমেষ: এটি সঠিক, কারণ এর বানান ঠিক আছে।
রুগ্ণ: এটি সঠিক, কারণ এর বানানও সঠিক।
পরিবহণ: এই বানানটিও সঠিক।
অপরাহ্ন: এটি ভুল বানান, সঠিক বানান হল অপরাহ্ণ।
তাহলে, বুঝতে পারা যাচ্ছে যে "অপরাহ্ন" বানানটি অষ্টমোকভাবে সঠিক নয় এবং সঠিক বানান হিসেবে "অপরাহ্ণ" ব্যবহৃত হয়।
জব সলুশন